বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল অবশেষে কাঠমান্ডু থেকে দেশে ফিরছে বিমান বাহিনীর একটি বিশেষ ফ্লাইটে।
প্রীতি ম্যাচ খেলতে নেপালে গিয়েছিল জামাল ভূঁইয়ারা। কিন্তু দেশটিতে হঠাৎ করে সরকারবিরোধী আন্দোলন ও সহিংসতা শুরু হলে তারা হোটেলে আটকা পড়ে যান। দীর্ঘ অপেক্ষার পর বুধবার বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টা ৫৫ মিনিটে বিমান বাহিনীর বিশেষ একটি ফ্লাইটে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছেন হাভিয়ের কাবরেরা ও তার শিষ্যরা।
দলকে বিদায় জানানোর আগে নেপালে বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সিল পলিটিক্যাল মোহাম্মদ শোয়েব আব্দুল্লাহ পরিস্থিতির কঠিন দিকগুলো তুলে ধরেন। তিনি বলেন,
“পুরো ব্যাপারটাই ছিল খুব জটিল। মাত্র দেড় দিনে একটি দেশের পরিস্থিতি এভাবে খারাপ হয়ে যাবে, তা কেউই ভাবেনি। ৯ তারিখে ম্যাচ দেখার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, কিন্তু সকাল থেকে রাস্তাঘাট বন্ধ হয়ে যায়, গাড়ি পোড়ানো থেকে শুরু করে নানা সহিংসতা শুরু হয়। তখন সবচেয়ে বড় চিন্তা ছিল বাংলাদেশ দলের নিরাপত্তা।”
তিনি জানান, খেলোয়াড়রা যে হোটেলে ছিলেন, সেখানেও হামলার শঙ্কা দেখা দিয়েছিল। চারপাশে অশান্ত পরিবেশ থাকলেও আল্লাহর রহমতে কোনো অঘটন ঘটেনি। ঢাকার নির্দেশনায় বিশেষ ফ্লাইটের অনুমতি নিয়ে দ্রুত দলকে দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করা হয়। নেপালের কর্তৃপক্ষকেও ধন্যবাদ জানানো হয় জরুরি অবতরণের অনুমতি দেওয়ার জন্য।
বাফুফে, নেপালে বাংলাদেশ দূতাবাস এবং সরকারের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দলকে নিরাপদে দেশে ফেরানো সম্ভব হয়েছে। রাষ্ট্রদূত শফিকুর রহমান ও দূতাবাসের কর্মকর্তারা বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন। একই ফ্লাইটে নেপালে সংবাদ সংগ্রহে যাওয়া সাংবাদিকরাও ফিরছেন।
বাংলাদেশ দল ৩ সেপ্টেম্বর নেপালে গিয়েছিল দুটি প্রীতি ম্যাচ খেলতে। প্রথম ম্যাচ ৬ সেপ্টেম্বর গোলশূন্য ড্র হলেও ৯ সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় ম্যাচটি বাতিল হয়ে যায় সহিংসতার কারণে। দেশজুড়ে বিক্ষোভ, সংঘর্ষে প্রাণহানি, প্রধানমন্ত্রীসহ কয়েকজন মন্ত্রীর পদত্যাগ, সংসদ ভবন ও মন্ত্রীদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগের পর পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে ওঠে। কারফিউ জারি হয়, বিমানবন্দরও বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এর আগে মঙ্গলবার দলের জন্য পাঠানো একটি ফ্লাইট অনুকূল পরিস্থিতি না থাকায় কাঠমান্ডুতে নামতে পারেনি এবং ঢাকায় ফিরে আসে।
পরিস্থিতির উন্নতির পর দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় জানায়, সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে খেলোয়াড়দের নিরাপদ প্রত্যাবর্তনে নজর রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশ দলের মিডফিল্ডার সোহেল রানা ভিডিও বার্তায় জানান, “গতকালকের তুলনায় আমাদের অবস্থা অনেক ভালো। সেনাবাহিনী দায়িত্ব নেওয়ায় নিরাপত্তা আরও জোরদার হয়েছে। পরিবারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে, সবাই এখন নিশ্চিন্ত।”
অবশেষে নানা চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করে বিশেষ ফ্লাইটে দেশের পথে ফিরছেন জামাল ভূঁইয়া ও তার সতীর্থরা।