ইংল্যান্ড কোচ ব্রেন্ডন ম্যাককালাম জানিয়েছেন, তিনি এখনো ওলি পোপ ও জেমি স্মিথের পাশে আছেন। তার কথায়, দলকে এখন লক্ষ্য রাখতে হবে—“একে অপরের পাশে থাকা, মনোবল ধরে রাখা।”
শনিবার লিভারপুলের মিডিয়া ম্যানেজারের ভাইরাল হওয়া প্রতিক্রিয়া—মোহামেদ সালাহর উত্তেজিত মন্তব্যের পর—ব্রিসবেনেও আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এল্যান্ড রোড থেকে গাব্বা—দূরত্ব ১০ হাজার মাইলেরও বেশি। কিন্তু দুই জায়গার প্রতিক্রিয়াই যেন একই প্রশ্ন তুলেছে—এ কথা বলার দরকার ছিল?
অ্যাশেজে পরপর দ্বিতীয় ম্যাচে ৮ উইকেটে হারের পর ম্যাককালাম বলেছিলেন, তার মনে হয় দল ‘অতিরিক্ত’ অনুশীলন করেছে। কথা শুনে অনেকে ভাবছেন—এমন মন্তব্য কেন?
ম্যাককালামের যুক্তি বোঝা কঠিন নয়। তার মতে, ইংল্যান্ড টেস্ট দল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বাস্তবতার চাপ থেকে অনেকটাই সুরক্ষিত—এক ধরনের ‘বাবল’-এ থাকে তারা। কোচ ও অধিনায়ক বেন স্টোকস, দুইজনই কঠিন সময়ে দলের ঢাল হয়ে দাঁড়ান। কিন্তু এবার সেই ঢাল হয়তো উল্টো সমালোচনাই টেনে এনেছে।
এরই মধ্যে অনেকেই ম্যাককালামের দিকে আঙুল তুলছেন। ২০২৭ পর্যন্ত চুক্তি থাকলেও খারাপ সময় আরো ঘনীভূত হলে তিনিই প্রথম ঝরতে পারেন—হয়তো একাই নয়।
ম্যাককালাম বলেন,
“ক্যাপ্টেন আর কোচ হিসেবে আমরা এই দায়িত্ব কাঁধে নিতেই সাইন করি। চাপও আমাদেরই নিতে হয়।”
তবু সমালোচনা হচ্ছে এক জায়গায়—দল কি খুব বেশি সুরক্ষিত হয়ে গেছে? টেস্ট ক্রিকেট কঠিন। এখানে লড়াই লাগে, ব্যথা পেতেই হয়। আর ইংল্যান্ডের খেলোয়াড়দের মধ্যে সেই কঠিন সময়ে লড়াই জেতার মানসিকতা কম বলে অনেকেই মনে করছেন।
তবে ম্যাককালাম ও স্টোকস যুগের ভালোর দিকগুলো ভুলে গেলে চলবে না।
২০২২ সালের সেই গ্রীষ্ম—এক জয়ের দল পরপর চারটি বড় রানের লক্ষ্য তাড়া করে জিতেছিল। হায়দ্রাবাদের জয়, আগের অ্যাশেজে ২–০ থেকে ফিরে ২–২ করা—এসবই তো এই ব্যবস্থাপনার সাফল্য।
ম্যাককালাম বিশ্বাস করেন, অনেক সময় অতিরিক্ত আগ্রহই সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা ধোঁয়াশা করে।
তিনি বলেন,
“অস্ট্রেলিয়ায় প্রতিটি ভেন্যু আলাদা। তাই একই প্রস্তুতি সবক্ষেত্রে চলে না। পাঁচ দিন টানা গরমে অনুশীলন করলে খেলোয়াড়রা খালি হয়ে যায়—মানসিকভাবেও এবং শারীরিকভাবেও।”
এরপর তিনি ওলি পোপকে সমর্থন দেন। স্টোকসের আমলে তিন নম্বরে উঠে আসা পোপ শুরুতে ভালো করলেও এরপর ৩৩, ০ ও ২৬ রানে আউট হয়েছেন। চারটিই ছিল খারাপ সিদ্ধান্তের ফল। তবু কোচ বলছেন—
“সে আমাদের এখানে নম্বর থ্রি। ভালোই করেছে, ৪০-এর ওপর গড়।”
জেমি স্মিথের দিকেও সাপোর্ট রয়েছে। স্টোকস–ম্যাককালাম যুগে আগ্রাসী স্ট্রোকপ্লের জন্য দলে জায়গা পাওয়া এই কিপার–ব্যাটসম্যান এবার ব্যাটে–গ্লাভসে ছন্দ খুঁজে পাচ্ছেন না। সাত ইনিংসে গড় মাত্র ১০.১৪। প্রচুর সময় কিপিং করার কারণে ব্যাটিংয়ে প্রভাব পড়ছে বলেই মনে করেন অনেকে।
তবে ম্যাককালাম বললেন—
“সে সাহসী ক্রিকেট খেলে। কঠোর পরিশ্রম করে। অ্যাডিলেডের বড় বাউন্ডারি আর পিচ তার জন্য ভালোই হবে বলে মনে করি।”
যাদের নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে, বিশেষ করে পোপ ও স্মিথ—তাদের জন্য এটা বার্তা যে ড্রেসিংরুমের পরিবেশ এখনো অটুট। কোচ বলছেন—
“আমরা আমাদের ভাষা, আমাদের স্টাইল বদলাচ্ছি না। অস্ট্রেলিয়ায় এসে দুর্বল হওয়া যাবে না। এখানে আত্মবিশ্বাস হারালে বিপদ।”
সামনে নয় দিনের বিরতি। তার আগে দল যাচ্ছে নুসায়, মন পরিষ্কার করতে। সাংবাদিক–ফটোগ্রাফাররা পিছু নিলেও তারা নিজেদের মতো রিল্যাক্সই করবে বলে জানিয়েছেন কোচ।
স্টোকসের তুলনায় ম্যাককালাম হয়তো বেশি চনমনে লাগছিলেন, কিন্তু দুজনই পরবর্তী তিন দিনে নিজেদের একই পথে আনবেন। অ্যাডিলেডে এসে লড়াই আবার শুরু হবে।
শেষে ম্যাককালামের বার্তা—
“আমরা আগেও ২–০ পিছিয়ে ছিলাম, আর প্রায় জিতেই ফেলেছিলাম। এখন আফসোস করলে চলবে না। উঠে দাঁড়াও, ভুলগুলো ঠিক করো, আর লক্ষ্য ধরে এগিয়ে যাও।”