১৩ মিলিমিটার ঘাসে মোড়া সবুজ উইকেটে দিনজুড়ে ব্যাটিংয়ের প্রদর্শনী উপহার দিল নিউ জিল্যান্ড। পুরো দিনে মাত্র একটি উইকেট তুলতে পেরেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, আর তাতেই বোঝা যাচ্ছে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে।
চা-বিরতির কিছু পর টিভি ক্যামেরায় ধরা পড়েন কেন উইলিয়ামসন। প্যাড, গ্লাভস ও হেলমেট পরেই ড্রেসিংরুমে ব্যাটিংয়ের শ্যাডো করছিলেন তিনি। সকাল থেকেই প্রস্তুত হয়ে বসে থাকলেও প্রথম দিনে নামার সুযোগই হয়নি নিউ জিল্যান্ডের তিন নম্বর ব্যাটসম্যানের। কারণ ডেভন কনওয়ে ও টম ল্যাথামের উদ্বোধনী জুটি গড়ে তুলেছে একেবারে রেকর্ডময় একটি দিন।
দিনভর বলের পেছনে ছুটে শেষ পর্যন্ত শেষ বিকেলে মাত্র একটি উইকেটের দেখা পায় ক্যারিবিয়ানরা। তখন উইলিয়ামসনকে না নামিয়ে নাইটওয়াচম্যান হিসেবে পাঠানো হয় জেকব ডাফিকে। মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টের প্রথম দিন শেষে নিউজিল্যান্ডের সংগ্রহ ১ উইকেটে ৩৩৭ রান।
২৪৬ বল খেলে ১৩৭ রানে আউট হন অধিনায়ক টম ল্যাথাম। সিরিজে এটি তার টানা দ্বিতীয় এবং ক্যারিয়ারের ১৫তম টেস্ট সেঞ্চুরি। ওপেনার হিসেবে ছয় হাজার টেস্ট রানের মাইলফলকও ছুঁয়ে ফেলেছেন এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।
অন্যদিকে ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ সেঞ্চুরিকে দ্বিতীয় ডাবল সেঞ্চুরিতে রূপ দেওয়ার পথে আছেন ডেভন কনওয়ে। দিন শেষে তিনি অপরাজিত ১৭৮ রানে, খেলেছেন ২৭৯ বল।
দুজনের উদ্বোধনী জুটিতে এসেছে ৩২৩ রান। এটি নিউ জিল্যান্ডের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উদ্বোধনী জুটি। ১৯৭২ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেই গায়ানায় ৩৭২ রানের জুটি গড়েছিলেন টেরি জার্ভিস ও গ্লেন টার্নার। দেশের মাটিতে এটি কিউইদের সর্বোচ্চ ওপেনিং পার্টনারশিপ।
সকালে টস হেরেও বেশ আত্মবিশ্বাসী ছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক রস্টন চেইস। তিনি জানান, টস জিতলেও বোলিংই নিতেন। কারণ এই মাঠে সাধারণত ৭ থেকে ১০ মিলিমিটার ঘাস থাকলেও এবার রাখা হয়েছে ১৩ মিলিমিটার ঘাস।
তবু সেই সবুজ উইকেটেই আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন টম ল্যাথাম। দেশের মাঠে ২৫ টেস্ট পর নিউ জিল্যান্ডের কোনো অধিনায়ক টস জিতে আগে ব্যাটিং বেছে নিলেন। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে স্পষ্ট হয়ে ওঠে, সিদ্ধান্তটি কতটা নিখুঁত ছিল।
শুরুর দিকে ক্যারিবিয়ান বোলাররা ছিলেন যথেষ্ট নিয়ন্ত্রিত। প্রথম আট ওভারে আসে মাত্র ১১ রান। এরপর ধীরে ধীরে চাপ কাটে, বাউন্ডারি আসতে শুরু করে। রানের গতি বাড়তে থাকে, আর দুই ব্যাটসম্যান সাবলীল ছন্দে এগিয়ে যেতে থাকেন।
প্রথম সেশনে ওঠে ৮৩ রান। লাঞ্চের পর আগে ফিফটিতে পৌঁছান কনওয়ে—৮৯ বলে। এরপর ওয়ানডে গতিতে ব্যাট করে ১৪৭ বলেই পূর্ণ করেন শতরান। অন্যদিকে ১০২ বলে ফিফটি করা ল্যাথাম শতরানে পৌঁছান ১৮৩ বলে।
শতরানের পরপরই একটি জীবন পান ল্যাথাম। অ্যান্ডারসন ফিলিপের বলে সহজ ক্যাচ নিতে ব্যর্থ হন উইকেটকিপার টেভিন ইমলাখ।
শেষ পর্যন্ত দিনের একেবারে শেষ দিকে ভাঙে এই জুটি। ৮৪তম ওভারে দ্বিতীয় নতুন বল নেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ৮৭তম ওভারে কিমার রোচের দুর্দান্ত ডেলিভারিতে ল্যাথাম স্লিপে ক্যাচ দেন। বাঁদিকে ঝাঁপিয়ে চমৎকার ক্যাচ ধরেন রস্টন চেইস।
এরপর নাইটওয়াচম্যান ডাফিকে নিয়ে অপরাজিত থেকেই মাঠ ছাড়েন কনওয়ে।
একাদশে অতিরিক্ত ব্যাটসম্যান রেখে একজন বোলার কমানো ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দিনজুড়ে ভুগতে হয়েছে। দ্বিতীয় দিনে ঘুরে দাঁড়াতে না পারলে তাদের জন্য পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে উঠতে পারে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
- নিউ জিল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৯০ ওভারে ৩৩৭/১
(ল্যাথাম ১৩৭, কনওয়ে ১৭৮*, ডাফি ৯*; রোচ ১৯-৩-৬৩-১, সিলস ২১-১-৬৭-০, ফিলিপ ১৪-২-৭১-০, গ্রেভস ১৭-২-৫৫-০, চেইস ১৯-০-৭৫-০)