বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ১০০ টেস্ট খেলার দিনে মাত্র এক রান দূরে থেকে অপরাজিত থাকলেন মুশফিকুর রহিম। দিনশেষে তার ব্যাটে অমীমাংসিত রয়ে গেল সেই কাঙ্ক্ষিত সেঞ্চুরি।
শেষ বিকেলে মাঠজুড়ে তৈরি হয় তুমুল নাটকীয়তা। দিনের খেলার যখন দুই বল বাকি, মুশফিকের দরকার তখন দুই রান। পঞ্চম বলটি প্রিয় সুইপ শটে দুর্দান্ত টাইমিংয়ে খেলতেই গ্যালারি থেকে শুরু হয় উল্লাস—কিন্তু বল গিয়ে থামে স্কয়ার লেগে ফিল্ডারের হাতে। ফল—মেলে শুধু এক রান।
শেষ বলটিতে স্ট্রাইক পাননি তিনি। ওভার শেষেও তৈরি হয় বিভ্রান্তি—আরেকটি ওভার চলবে কি না তা ঠিক করতে একটু সময় নেন আম্পায়াররা। শেষ পর্যন্ত বেলস তুলে দিনের খেলা শেষ ঘোষণা হয়। একদিন ধরে জমে ওঠা উত্তেজনার সুরাহা হলো না সেদিনই—শততম টেস্টের প্রথম দিনটি মুশফিক শেষ করলেন ৯৯ রানে অপরাজিত থেকে।
মিরপুরে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম দিনে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৪ উইকেটে ২৯২।
ম্যাচটি শুরুই হয়েছিল মুশফিককে ঘিরে বিশেষ আবহ তৈরি করে। ১০০তম টেস্টের উদযাপনে ছিল নানা আয়োজন, ছিল বাড়তি উচ্ছ্বাস। এমন দিনে ব্যাট হাতে শতরান করলে তা সম্পূর্ণ হতো আরও অসাধারণভাবে—সেটিই হলো না, তবে তিনি অপরাজিত রয়েছেন এক রানের দূরত্বে।
ইনিংসের শুরু থেকে মুশফিক ছিলেন সতর্ক। আয়ারল্যান্ডের বোলিং তেমন ধার দেখাতে না পারলেও তিনি কোনও ঝুঁকি নেননি। ঠাণ্ডা মাথায় সোজা ব্যাটে ইনিংস গড়েছেন, প্রিয় স্লগ সুইপ, রিভার্স বা স্কুপ খেলেননি প্রায়ই। ১৮৭ বলের ইনিংসে তিনি বাউন্ডারি মেরেছেন মাত্র পাঁচটি।
দ্বিতীয় দিনের প্রথম রানটি করলেই তিনি হয়ে যাবেন শততম টেস্টে সেঞ্চুরি করা বিশ্বের ১১তম ক্রিকেটার।
আইরিশদের হয়ে চারটি উইকেটই শিকার করেছেন অফস্পিনার অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইন।
টসে জিতে ব্যাটিং নিয়ে বাংলাদেশ শুরুতে ভালোই তাল মিলিয়ে এগোচ্ছিল শাদমান ইসলাম ও মাহমুদুল হাসান জয়ের ওপেনিং জুটিতে। বিশেষজ্ঞ কোনো পেসার ছাড়াই নেমেছিল আয়ারল্যান্ড, বোলিং শুরু করেছিলেন অলরাউন্ডার জর্ডান নিল ও কাটির্স ক্যাম্ফার। তবে বাংলাদেশকে প্রথম ধাক্কা দেন ম্যাকব্রাইন—৩৫ রানে শাদমান এলবিডব্লিউ।
জয়ের ইনিংসও বড় হতে দেয়নি আইরিশ বোলাররা। আঁটসাঁট বোলিংয়ে ১০ ওভার বাউন্ডারিহীন থাকার পর ঝুঁকি নিয়ে মারতে গিয়ে ৩৪ রানে ধরা পড়েন তিনি।
শান্তর ইনিংসও টিকলো না বেশি। ম্যাকব্রাইনকে ছক্কা মারার পরের বলেই বোল্ড হয়ে ফেরেন ৮ রানে। ৯৫ রানে তিন উইকেট হারিয়ে কিছুটা চাপে পড়ে বাংলাদেশ।
চাপ আরও বাড়ত—যদি ম্যাকব্রাইনের বলে ২৩ রানে মুমিনুলের ক্যাচটি না পড়ত। জীবন পেয়ে মুশফিকের সঙ্গে জুটি গড়ে চাপ সামলে নেন তিনি। আরও একবার জীবন পাওয়া সত্ত্বেও ৬৩ রানে থেমে যায় তার ইনিংস।
শেষ সেশনটা ছিল মুশফিক–লিটনের। ধীরস্থির ব্যাটিংয়ে দুজন মিলে আরেকটি কার্যকর জুটি গড়েন। তিন স্পিনার দিয়ে ফিল্ড ছড়িয়ে বড় শট খেলাতে চেষ্টা করেছিলেন আইরিশ অধিনায়ক, তবে সেটি খুব একটা কার্যকর হয়নি।
দিনের শেষ ভাগে উত্তেজনা তুঙ্গে ওঠে—মুশফিক যখন ৯০ ছোঁয়, তখন বাকি থাকে ছয় ওভার। কিন্তু শেষ দিকে আইরিশরা সময় নষ্ট করতে থাকে, আর মুশফিকও তাড়াহুড়ো করেননি। শেষ ওভার শুরুর সময় তার প্রয়োজন ছিল তিন রান। ওভারের তৃতীয় বলে নেন সিঙ্গেল, পরের বলে লিটনও নেন এক রান। আবারও সুযোগ জন্মায়। কিন্তু পঞ্চম বলটিতে মেলে শুধু এক রান। শেষ বলটি খেলেন লিটন, তিনি অপরাজিত ৪৭ রানে।
শেষ ওভারের প্রতিটি ডেলিভারির আগে সময় নেওয়ার কৌশলও ছিল আইরিশ লেগস্পিনার গ্যাভিন হোয়ের। যাতে ৯০ ওভার পুরো হলে খেলা আর এগোতে না হয়।
তবু মুশফিকের সেঞ্চুরি যদি সেদিনই হতো—বাংলাদেশের জন্য আর ভালো কী হতো? তবুও এক রানে থেমে থাকা এই অপেক্ষা, রাতভর রোমাঞ্চ—এটাও তো ক্রিকেটেরই সৌন্দর্য!
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৯০ ওভারে ২৯২/৪
জয় ৩৪, সাদমান ৩৫, মুমিনুল ৬৩, শান্ত ৮, মুশফিক ৯৯*, লিটন ৪৭*
নিল ৮-০-৩৭-০, ক্যাম্ফার ৮-০-২৮-০, ম্যাকব্রাইন ২৬-২-৮২-৪, হামফ্রিজ ২৬-০-৮৩-০, হোয়ে ১৯-১-৪৮-০, টেক্টর ৩-০-১০-০