এনামুল হক, মোসাদ্দেক হোসেনসহ প্রাথমিক তালিকায় থাকা মোট ৯ ক্রিকেটারকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
বিপিএল নিলামের প্রাথমিক তালিকায় নাম থাকলেও চূড়ান্ত তালিকায় জায়গা পাননি অন্তত ৯ ক্রিকেটার। বিসিবির ইন্টেগ্রিটি কমিটির প্রধান অ্যালেক্স মার্শালের সুপারিশ অনুযায়ীই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য সচিব ইফতেখার রহমান।
গত আসরের বিপিএলে ফিক্সিংসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে যাদের নাম উঠে এসেছিল, সেই ক্রিকেটারদের নিলাম তালিকায় না রাখার আলোচনা চলছিল কিছুদিন ধরেই। এবার সেই গুঞ্জনই সত্যি হলো।
শনিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে ইফতেখার রহমান নিশ্চিত করেন, অভিযুক্ত বেশ কজন ক্রিকেটারকে চূড়ান্ত তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, “২৬ নভেম্বর যে নিলামের তালিকা করা হয়েছিল, সেখান থেকে ৯ জনকে বাদ দেওয়া হচ্ছে। এখন আমি ইন্টেগ্রিটি ইউনিটের অফিসে যাচ্ছি চূড়ান্ত তালিকায় স্বাক্ষর করতে। আমরা নিজেরা তালিকাটি পরিবর্তন করিনি—তদন্ত প্রতিবেদন মূল্যায়ন করেছে ইন্টেগ্রিটি কমিটি। পুরো প্রক্রিয়াটি পরিচালনা করেছেন অ্যালেক্স মার্শাল। আমি শুধু স্বাক্ষর করব।”
গত আসরের বিপিএলে সন্দেহজনক কর্মকাণ্ডের তদন্তে বেশ কয়েকজন ক্রিকেটারের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেয়েছে স্বাধীন তদন্ত কমিটি। ইন্টেগ্রিটি কমিটির প্রতিবেদনে তাদের ‘রেড ফ্ল্যাগ জোনে’ রাখা হয়েছে বলেও জানা গেছে।
প্রাথমিক তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন—এনামুল হক, মোসাদ্দেক হোসেন, আলাউদ্দিন বাবু, সানজামুল ইসলাম, নিহাদ-উজ-জামান, শফিউল ইসলাম, মিজানুর রহমান, শিহাব জেমস ও মনির হাসান খান।
এই তালিকায় মনির হাসান খান ও শিহাব জেমসের নাম বিশেষভাবে বিস্ময় জাগিয়েছে। ঘরোয়া ক্রিকেটের নিয়মিত মুখ মনিরকে ২০২০ সালের পর আর বিপিএলে দেখা যায়নি। ৩৯ বছর বয়সী এই বাঁহাতি স্পিনার সর্বশেষ স্বীকৃত ম্যাচ খেলেছেন প্রায় দেড় বছর আগে, ঢাকা লিগে।
অন্যদিকে শিহাব জেমস এখনো বিপিএলে অভিষেকই করতে পারেননি। গত বছর বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব–১৯ দলের হয়ে যুব এশিয়া কাপ জিতেছেন তিনি। স্বীকৃত ক্রিকেটে তার ম্যাচ সংখ্যা মাত্র তিন। তাদের ক্ষেত্রে স্পষ্ট ও নির্দিষ্ট প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিসিবির এক কর্মকর্তা বলেন, “ইন্টেগ্রিটি ইউনিটের প্রতিবেদন ভিত্তিতেই তাদের বাদ দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে আমরা কিছু বলতে পারব না।”
বিসিবি সূত্র জানিয়েছে, ঢাকা লিগের একটি ম্যাচে জেমসের পারফরম্যান্স নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছিল, যা তদন্তের জন্য ইন্টেগ্রিটি কমিটির কাছে পাঠানো হয়েছিল। তবে সেটিরও নিশ্চিত তথ্য মেলেনি।
বিসিবির সহ–সভাপতি এবং বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য শাখাওয়াত হোসেন আগেই জানিয়েছিলেন—আগামী আসরে যেন কোনো ধরনের ফিক্সিং বিতর্ক না ওঠে, সেটি নিশ্চিত করতে বিতর্কিত বা সন্দেহভাজন ক্রিকেটারদের তালিকায় রাখা হবে না। এবার চূড়ান্ত তালিকায় সেই সিদ্ধান্তই বাস্তবায়নের চেষ্টা হয়েছে।
তিনি বলেন, “টেকনিক্যাল কমিটি, নির্বাচকরা এবং ইন্টেগ্রিটি ইউনিটের প্রধান অ্যালেক্স মার্শাল একসঙ্গে তদন্ত প্রতিবেদন মূল্যায়ন করেছেন। কয়েকজন ক্রিকেটারের বিরুদ্ধে ইন্টেগ্রিটি–সংক্রান্ত অভিযোগ ছিল, সেগুলো অ্যালেক্স নিজে যাচাই করেছেন। চূড়ান্ত তালিকা থেকে যাদের বাদ দেওয়া হয়েছে, সেখানে তার মতামত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।”
শেষ আসরের বিপিএল শেষে গঠিত স্বাধীন তদন্ত কমিটি প্রায় ৯০০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। তদন্তে অন্তত ১৮–১৯ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, যার মধ্যে কিছু নাম এবার প্রকাশ পেল।
অভিযুক্তদের মধ্যে কর্মকর্তারাও আছেন। তাদের বিষয়ে দলগুলোকে বিসিবির পক্ষ থেকে আলাদা নির্দেশনা দেওয়া হবে বলেও জানা গেছে।