দলের ভেতরের একের পর এক অব্যবস্থাপনায় ক্ষুব্ধ হয়ে অনুশীলন মাঝপথে ছেড়ে সিএনজি অটোরিকশায় স্টেডিয়াম ত্যাগ করেছিলেন নোয়াখালী এক্সপ্রেসের কোচ খালেদ মাহমুদ ও সহকারী কোচ তালহা জোবায়ের।
কয়েক দিন ধরেই ক্রিকেটারদের দৈনিক ভাতা আটকে ছিল। অনুশীলনের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের ঘাটতি ছিল, সঙ্গে যোগ হয়েছিল আরও নানা লজিস্টিক জটিলতা। এসব সমস্যা নিয়ে দীর্ঘদিনের জমে থাকা অসন্তোষই শেষ পর্যন্ত বিপিএল শুরুর ঠিক আগের দিন বিস্ফোরণ ঘটায়। নজিরবিহীন এই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে মাঠ ছেড়ে চলে যান কোচিং স্টাফের দুই গুরুত্বপূর্ণ সদস্য।
ঘটনাটি নিয়ে বিসিবি পরিচালক ও বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্যসচিব ইফতেখার রহমান স্পষ্ট জানিয়ে দেন, এ ধরনের ঘটনা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
শুক্রবার বিপিএলের উদ্বোধনী দিনে মাঠে নামার কথা নোয়াখালী এক্সপ্রেসের। তবে টুর্নামেন্ট শুরুর আগের দিনই দলের ভেতরের অস্থিরতায় নড়বড়ে অবস্থায় পড়ে তারা।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে অনুশীলন শুরুর আগেই অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। প্রচণ্ড ক্ষোভে কোচ খালেদ মাহমুদ ও সহকারী কোচ তালহা জোবায়ের সিএনজি অটোরিকশায় করে মাঠ ছাড়েন। অটোরিকশায় বসেই দলের এক কর্মকর্তার সঙ্গে কথোপকথনে লজিস্টিক ব্যবস্থাপনার নানা ঘাটতি নিয়ে তাদের তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ পায়।
এরই মধ্যে টুর্নামেন্ট শুরুর আগে চট্টগ্রাম দলের মালিকানা বদল নিয়ে অস্বস্তিতে ছিল বিসিবি। তার ওপর নোয়াখালীর এই ঘটনা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে। ইফতেখার রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “টুর্নামেন্ট শুরুর ঠিক আগে এমন ঘটনা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।”
তিনি আরও বলেন, “গত কয়েক দিনে নোয়াখালী দলের টিম ম্যানেজমেন্টের পক্ষ থেকে কিছু অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটেছে। এতে আমরা বিব্রত ও লজ্জিত। মালিকপক্ষ আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তারা দুই কোটি টাকার পে-অর্ডারের পাশাপাশি ব্যাংক গ্যারান্টিও দিয়েছে। যদি দল পরিচালনায় তারা ব্যর্থ হয়, আমাদের কাছে জামানত আছে। প্রয়োজনে সেই অর্থ ব্যবহার করে সংশ্লিষ্ট সবাইকে পরিশোধ করা হবে। প্রশ্ন হচ্ছে, তারা কেন বিপিএলে এসেছে।”
ইফতেখার রহমান জানান, ক্রিকেটারদের দৈনিক ভাতার বিষয়টি কয়েক দিন ধরেই ঝুলে ছিল এবং সেই সময় খেলোয়াড়দের নিজেদের টাকায় খাওয়া-দাওয়া করতে হয়েছে। তিনি বলেন, “সুজন (খালেদ মাহমুদ) মাঠ ছাড়ার সময় আমার সঙ্গে কথা হয়েছে। আমি তাকে বলেছি, যা মনে চায় করতে পারে। টুর্নামেন্টের একেবারে শেষ প্রস্তুতিপর্বে এসে যেভাবে বিপিএল বারবার কলুষিত হচ্ছে, তা মেনে নেওয়ার মতো নয়।”
অটোরিকশায় করে চলে যাওয়ার সময় দলের এক কর্মকর্তা তাদের থামানোর চেষ্টা করে বলেন, “দেখতে খারাপ লাগছে…”। জবাবে খালেদ মাহমুদ বলেন, “লাগুক… আমার খারাপ লাগে না? আমার খারাপ লাগে না!”
কথোপকথনের বিভিন্ন পর্যায়ে কোচের মুখে শোনা যায়, “কাজ করতে ইচ্ছে করছে না, বিপিএল করব না…”, “কোচ আছে, অনেক কোচ আছে, নিতে পারবে…”।
সহকারী কোচ তালহা জোবায়ের হতাশ কণ্ঠে বলেন, “জীবনে অনেক বিপিএল করেছি, কিন্তু আমার কাছে এটিই সবচেয়ে বিরক্তিকর বিপিএল মনে হচ্ছে।”
দলের মালিকপক্ষের নানা তৎপরতার পর শেষ পর্যন্ত আবার অনুশীলনে ফেরেন খালেদ মাহমুদ ও তালহা। পরে সংবাদমাধ্যমের সামনে খালেদ মাহমুদ বলেন, “ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল, হিট অব দ্য মোমেন্টে ঘটনাটা ঘটেছে।”