সতীর্থদের চোটের সুযোগে ৯৪ হাজার দর্শকের সামনে ব্যাট-বলে ঝলক দেখালেন মাইকেল নিসার, হয়ে উঠলেন প্রথম দিনের নায়ক।
চার বছর আগে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেকের পর এ মৌসুমে শুক্রবার পর্যন্ত খেলেছেন মাত্র দুটি ম্যাচ। গুরুতর চোটের কারণে কয়েক মাস আগেও নিসার টেস্টে খেলতে পারবেন কি না, তা নিশ্চিত ছিলেন না। কিন্তু বক্সিং ডে টেস্টে সুযোগ পেয়ে তিনি পুরো ম্যাচে নিজের দক্ষতা দেখালেন, ব্যাট-বলে ঝলক ছড়িয়ে প্রথম দিনের নায়ক হয়ে উঠলেন।
অস্ট্রেলিয়ার দাপটের বিরুদ্ধে ইংল্যান্ডের ব্যর্থ ব্যাটিংয়ের কারণে সিরিজের প্রথম তিন টেস্টেই জয় নিশ্চিত করেছে স্বাগতিকরা। সফরকারীদের সামনে এখন কেবল হতাশাজনক সফরকে কিছুটা ভালো করার চেষ্টা। সেই লক্ষ্যেই মেলবোর্ন টেস্টের প্রথম দুই সেশনে অস্ট্রেলিয়াকে গুটিয়ে দেন ১৫২ রানে; দলের সর্বোচ্চ ৪৯ বলে ৩৫ রান করেন পেস বোলিং অলরাউন্ডার নিসার।
পরে নিজের আসল কাজেও নিসার দারুণ পারফর্ম করেন। ইংল্যান্ডের ব্যাটিংয়ের শুরু তৃতীয় সেশনে চরম হতাশায় রূপ নেয়। নিসার একে একে জ্যাকব বেথেল, জো রুট, বেন স্টোকস এবং পরে ব্রাইডন কার্সকে ফিরিয়ে দেন। ৪৫ রানে তার শিকার ৪ উইকেট।
ইংল্যান্ড ২৯ ওভার ৫ বল খেলে ১১০ রানে অলআউট হয়। অস্ট্রেলিয়া পায় ৪২ রানের লিড।
মাস তিনেক পরেই নিসারের বয়স পূর্ণ হবে ৩৬। গত বছরের হ্যামস্ট্রিংয়ের গুরুতর চোট এবং বয়স তার পথে বাধা ছিল। বছরের শুরুতে টেস্ট দলে ছিলেন না তিনি, পার্থে গোলাপি বলের প্রথম টেস্টের ১৫ জনের স্কোয়াডের বাইরে ছিলেন।
কিন্তু জশ হেইজেলউড ও শন অ্যাবটের চোটে সুযোগ আসে নিসারের সামনে। একাদশে সুযোগ পেয়ে ক্যারিয়ারে প্রথমবার ইনিংসে পাঁচ উইকেট পান। এই পারফরম্যান্সের পরও অ্যাডিলেইড টেস্টে দলে জায়গা হয়নি।
মেলবোর্নে যখন এই দুইজন ঠিক ছিলেন, তখন আবার সুযোগ আসে নিসারের। গোলাপি বলে তিনটি টেস্ট খেলার পর লাল বলে সুযোগ পেয়ে ৯৪,১৯৯ দর্শকের সামনে প্রথম দিনের সেরা পারফর্মার হয়ে যান তিনি।
দিনের খেলা শেষে উচ্ছ্বাসভরা কণ্ঠে নিজের অনুভূতি জানালেন নিসার। পেছনে ফিরে তাকিয়ে বললেন,
“অস্ট্রেলিয়ার হয়ে আবার খেলতে পারব কি-না, সেটা কিছুদিন আগেও জানতাম না। অবিশ্বাস্য লাগছে।”
“ছোটবেলায় এটাই ছিল আমার স্বপ্ন। প্রতি বক্সিং ডেতে সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে আমি ও আমার ভাই কয়েক ঘণ্টা ক্রিকেট খেলতাম, তারপর বাড়ি ফিরে ক্রিকেট ম্যাচ দেখতাম। আমাদের জন্য পুরো দিনটাই ক্রিকেট। এখন এখানে অংশ নিতে পারা, স্বপ্ন সত্যি হওয়ার মতো। এই ভাবনাই আমার মনকে আন্দোলিত করছে।”
২০ উইকেট পতনের পাগলাটে দিনের শেষ দিকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামে অস্ট্রেলিয়া। কোনো উইকেট হারানো ছাড়াই ৪ রান করে, ৪৬ রানের লিড নিয়ে দিন শেষ করে।