আট মাস পরই শুরু হতে যাচ্ছে ফুটবল বিশ্বকাপ। এর আগে একটি পরিপূর্ণ ও কার্যকর দল গড়ে তুলতে মরিয়া ব্রাজিল কোচ কার্লো আনচেলত্তি। সেই পথে তিনি সঠিকভাবেই এগিয়ে যাচ্ছেন বলেই মনে হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বিরতিতে দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে ৫-০ ব্যবধানে জয় পেয়ে মুগ্ধ করেছে তাঁর দল। শুধু জয় নয়, খেলার ধরণেও ছিল নজরকাড়া ছাপ।
তবে আনচেলত্তির বর্তমান দলে যিনি সবচেয়ে স্থায়ী ও নিশ্চিত সদস্য হয়ে উঠেছেন, তিনি হলেন মিডফিল্ডার ব্রুনো গিমারেস। নিউক্যাসলের এই তারকা এখন দলের মিডফিল্ডের অদ্বিতীয় শক্তি। ২০২২ সালের পর থেকে ব্রাজিলের হয়ে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলা এই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারই একমাত্র খেলোয়াড়, যিনি আনচেলত্তির অধীনে হওয়া সব পাঁচটি ম্যাচেই মাঠে নেমেছেন।
গত সেপ্টেম্বরেই আনচেলত্তি তাঁকে “অপ্রতিদ্বন্দ্বী” বলে উল্লেখ করেছিলেন — যা নিছক প্রশংসা নয়, বরং বাস্তবের প্রতিফলন। রামন মেনেজেস, ফার্নান্দো দিনিজ কিংবা দরিভাল জুনিয়রের সময়েও গিমারেস ছিলেন ব্রাজিলের সবচেয়ে ধারাবাহিক পারফর্মারদের একজন।
কাতার বিশ্বকাপের পর ব্রাজিলের হওয়া ৩০ ম্যাচের ২৫টিতেই তিনি ছিলেন প্রথম একাদশে। এক ম্যাচে নেমেছিলেন বদলি হিসেবে, আর বাদ পড়েছেন মাত্র দুটি ম্যাচ থেকে— যার একটি নিষেধাজ্ঞার কারণে। এই পরিসংখ্যানই প্রমাণ করে, ২০২৬ বিশ্বকাপের পথে গিমারেস ব্রাজিলের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
নিজেও এখন উপলব্ধি করছেন জাতীয় দলে নিজের বাড়তি মূল্য। জাপানের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচের আগে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন,
“জাতীয় দলের হয়ে এটাই আমার সেরা সময়গুলোর একটি। এই সময়ে অনেক কিছু ঘটেছে, অনেক উত্থান-পতন ছিল। কিন্তু আমরা ব্যক্তিগত ও দলীয়ভাবে আরও শক্তিশালী হয়েছি। কোচ যে ফরমেশনই দেন না কেন, আমরা ভালো খেলছি। আমি ক্লাবে আরও উন্নতি করতে চাই, যেন দলে নিজের জায়গা আরও মজবুত হয় এবং কোচ সন্তুষ্ট থাকেন।”
আনচেলত্তির অধীনে হওয়া প্রতিটি ম্যাচেই শুরু থেকে মাঠে নেমেছেন গিমারেস। এই সময়েই গড়ে উঠেছে কোচ ও খেলোয়াড়ের মধ্যে বিশেষ সম্পর্ক। এমনকি দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে অংশ নিতে তাঁর ফ্লাইটে সমস্যা দেখা দিলে, ব্রাজিল ফুটবল ফেডারেশন (সিবিএফ) বিশেষ ব্যবস্থায় তাঁকে নিয়ে যায়।
কোচের প্রতি নিজের বিশ্বাস নিয়ে গিমারেস বলেন,
“কোচ আমার ওপর প্রচুর আস্থা রাখেন, আর আমি এখন জাতীয় দলে নিজের সেরা সময়টা কাটাচ্ছি। এটা আমার জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। জাপানে ফিরতে পেরে ভালো লাগছে— এখানেই তো অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম। আমরা জাপানকে ভালোভাবে বিশ্লেষণ করেছি, তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো মাঠে আমাদের পারফরম্যান্স। একাদশ এখনো ঘোষণা হয়নি, তবে যেই খেলুক, আমরা ভালো ফুটবলই খেলব। বিশ্বকাপ সামনে, পুরো দেশ অপেক্ষায়— আমরা সেরাটা দিতে চাই।”
বিশ্বকাপকে সামনে রেখে আনচেলত্তি এখন দল চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়ায় রয়েছেন। তাই সামনের দিনগুলোয় আরও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলবে। এ প্রসঙ্গে গিমারেস বলেন,
“আমরা জানি, দল এখনো চূড়ান্ত হয়নি। নতুন খেলোয়াড় দেখা বা পরীক্ষা করা স্বাভাবিক বিষয়। বিশ্বকাপ শুধু প্রথম একাদশের ব্যাপার নয়, পুরো স্কোয়াডের ব্যাপার। যারা বেঞ্চে থাকবে, তারাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। তাই দলটাকে সঠিকভাবে গড়ে তোলা দরকার। কোচ দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে আমরা ভালো খেলছি, এই ধারাটা ধরে রাখতে চাই।”
আগামীকাল বিকেলে আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে ব্রাজিল মুখোমুখি হবে জাপানের। সবকিছু ঠিক থাকলে, সেই ম্যাচেও ব্রুনো গিমারেসকে দেখা যাবে শুরু থেকেই একাদশে।