পূর্বের রোমাঞ্চকর জয়ের পর আবারও হোঁচট খেল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে টানা অষ্টম সিরিজ জয় নিশ্চিত করল পাকিস্তান।
রোস্টন চেইস ব্যাটের কানায় লেগে একটি চার পেলেও স্বস্তিতে ছিলেন না। ঠিক এক বল পরেই তাকে ‘রিটায়ার্ড আউট’ করে নেওয়া হয়। এরপর দলের আশা নিয়ে মাঠে নামেন জেসন হোল্ডার। কিন্তু আগের ম্যাচের নায়ক এবার দ্বিতীয় বলেই বোল্ড হয়ে ফেরেন শূন্য রানে। কঠিন সমীকরণে এরপর আর ম্যাচে ফিরতে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সাহিবজাদা ফারহান ও সাইম আইয়ুবের দারুণ উদ্বোধনী জুটির ধারায় ম্যাচ ও সিরিজ দুই-ই নিজেদের করে নেয় পাকিস্তান।
তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১৩ রানে হারিয়ে তিন ম্যাচের সিরিজ ২–১ ব্যবধানে জিতে নেয় পাকিস্তান।
এই সংস্করণে দুই দলের মুখোমুখি হওয়া সবকটি আটটি দ্বিপাক্ষিক সিরিজই এখন পাকিস্তানের দখলে।
ফ্লোরিডার আগের দুই ম্যাচের তুলনায় শেষ ম্যাচের পিচ ব্যাটিং সহায়ক ছিল বেশি। বাংলাদেশ সময় রোববার সকালে হওয়া এই ম্যাচে পাকিস্তান ২০ ওভারে ৪ উইকেটে তোলে ১৮৯ রান।
১৩৮ রানের জুটিতে দলের ভিত গড়ে দেন সাহিবজাদা ফারহান ও সাইম আইয়ুব।
৫৩ বলে ৭৪ রানের ইনিংস খেলেন সাহিবজাদা, যেখানে ছিল ৫টি ছক্কা। সাইম করেন ৪৯ বলে ৬৬।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে আথানেজ ও রাদারফোর্ডের ফিফটির পরও থেমে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংস, স্কোরবোর্ডে ১৭৬।
একদিন আগেও টস জিতে ব্যাট করে ধুঁকেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ভিন্ন উইকেটে পরদিন ব্যাটিং নেয় পাকিস্তান অধিনায়ক সালমান আলি আগা, আর দারুণ সূচনা এনে দেন দুই ওপেনার।
প্রথম দুই ওভারে ছিলেন শান্ত। এরপর সাহিবজাদা রানের গতি বাড়ান। পরের তিন ওভারে তার ব্যাট থেকে আসে তিনটি ছক্কা।
পাওয়ার প্লেতে পাকিস্তান তোলে ৪৭ রান। তখন সাহিবজাদার সংগ্রহ ২০ বলে ৩১, সাইম ১৬ বলে ১৬।
সাহিবজাদা ফিফটি স্পর্শ করেন ৩৪ বলে। সাইম কিছুটা ধীরগতিতে শুরু করলেও পরে ছন্দে ফেরেন, ফিফটি করেন ৩৭ বলে।
এই সিরিজ শুরুর আগে সাইম ৩৩ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে মাত্র একটি ফিফটি করেছিলেন, এই সিরিজেই করেন দুটি।
শতরানের জুটি ভাঙে সাহিবজাদার বিদায়ে। শামার জোসেফের লো ফুল টসে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। পরে হোল্ডারের লো ফুল টসে ফেরেন সাইমও।
চোটের কারণে ফাখার জামান না থাকায় তিনে ব্যাট করতে নামেন হাসান নাওয়াজ। মারেন দুইটি ছক্কা, ৭ বলে করেন ১৫।
শেষ ওভারে খুশদিল শাহ (৬ বলে ১১*) ও ফাহিম আশরাফ (৩ বলে ১০*) ছক্কা হাঁকিয়ে যোগ করেন ১৯ রান। শেষ তিন ওভারে পাকিস্তান তোলে ৪০ রান।
জবাবে ব্যাটিংয়ে নামা ওয়েস্ট ইন্ডিজ শুরু থেকেই ছিল আক্রমণাত্মক। হাসান আলির প্রথম ওভারে তিনটি চার মারেন জুয়েল অ্যান্ড্রু। পরের ওভারে মোহাম্মদ নাওয়াজকে দুই চার ও এক ছক্কা মারেন আথানেজ।
আগের দিন ৪ ওভারে ১৩ রান দেওয়া নাওয়াজ এবার নিজের প্রথম ওভারেই দেন ১৭ রান।
পরে অবশ্য চাপ তৈরি করেন পাকিস্তানি বোলাররা। একাদশে ফেরা হারিস রউফ ফিরিয়ে দেন অ্যান্ড্রুকে (১৫ বলে ২৪)।
অধিনায়ক শাই হোপ তিনে নেমে খেলেন ৯ বলে ৭ রানের ধীর ইনিংস।
আথানেজ ও রাদারফোর্ড কিছুটা সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন, কিন্তু কেউই ম্যাচ শেষ করতে পারেননি।
আথানেজ ৪০ বলে ৬০ রান করে স্লগ করতে গিয়ে আউট হন। রাদারফোর্ড করেন ৩৫ বলে ৫১।
মাঝে ধীর ব্যাটিং করেন চেইস। দুটি বাউন্ডারি মারলেও সময়োপযোগী ব্যাটিং করতে পারেননি। ১২ বলে ১৫ রান করে সপ্তদশ ওভারে তাকে তুলে নেওয়া হয়।
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এটি ১২তম রিটায়ার্ড আউটের ঘটনা, তবে পূর্ণ সদস্য দেশের খেলোয়াড়দের মধ্যে চেইসই প্রথম।
শেষ তিন ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রয়োজন ছিল ৪১ রান। হোল্ডারকে লক্ষ্য করে এক ওভার রেখে দিয়েছিলেন পাকিস্তান অধিনায়ক সালমান। দুর্দান্ত বল করা বাঁহাতি রিস্ট স্পিনার সুফিয়ান মুকিম দ্বিতীয় বলেই ফ্লিপারে বোল্ড করে দেন হোল্ডারকে। ওভারে দেন মাত্র তিন রান—সেখানেই শেষ হয়ে যায় ম্যাচ।
শেষ ওভারে হাসান আলির বলেই গুডাকেশ মোটি একটি চার ও একটি ছক্কা মারলেও ব্যবধানই শুধু কমে, ম্যাচ জমে ওঠেনি।
এই নিয়ে দুই দলের ২৩ টি-টোয়েন্টিতে পাকিস্তানের জয় ১৭টিতে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ জিতেছে মাত্র ৩ ম্যাচ।
সাহিবজাদা ফারহান হয়েছেন ম্যাচ সেরা। সিরিজ জুড়ে ৭ উইকেট নেওয়া মোহাম্মদ নাওয়াজ হয়েছেন সিরিজ সেরা। তবে ট্রফি নিতে অধিনায়ক সালমান ডেকে নেন সুফিয়ান মুকিমকে—চমৎকার বোলিংয়ের পুরস্কার যেন তিনিই বুঝে নেন।
এখন শুরু হবে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ। ত্রিনিদাদের ব্রায়ান লারা স্টেডিয়ামে সিরিজের প্রথম ম্যাচ শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টায় (বাংলাদেশ সময়)।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
পাকিস্তান: ১৮৯/৪ (২০ ওভার)
সাহিবজাদা ৭৪, সাইম ৬৬, হাসান নাওয়াজ ১৫, খুশদিল ১১*, ফাহিম ১০*
বল: আকিল ৪-০-৩২-০, হোল্ডার ৪-০-৩৪-১, চেইস ৪-০-৩১-১, শামার ৪-০-৫৭-১, মোটি ২-০-১৪-০, শেফার্ড ২-০-২০-০
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ১৭৬/৬ (২০ ওভার)
আথানেজ ৬০, অ্যান্ড্রু ২৪, হোপ ৭, রাদারফোর্ড ৫১, চেইস ১৫, হোল্ডার ০, শেফার্ড ৪*, মোটি ১০*
বল: হাসান আলি ৩-০-৩৮-১, মোহাম্মদ নাওয়াজ ৩-০-৩৩-১, রউফ ৪-০-৩৪-১, ফাহিম ২-০-১৩-০, সাইম ৪-০-৩৮-১, মুকিম ৪-০-২০-১
ফল: পাকিস্তান ১৩ রানে জয়ী
সিরিজ: পাকিস্তান ২–১ ব্যবধানে জয়ী
ম্যাচ সেরা: সাহিবজাদা ফারহান
সিরিজ সেরা: মোহাম্মদ নাওয়াজ