পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের শেষ ম্যাচে স্বেচ্ছায় মাঠ ছেড়ে গিয়ে ‘রিটায়ার্ড আউট’ হন রোস্টন চেইস।
আউট যেভাবেই হোক, কোনো ব্যাটসম্যানের কাছে তা কখনোই ভালো লাগে না। তবে সবচেয়ে অপ্রত্যাশিত ও অস্বস্তিকর আউটের মধ্যে অন্যতম ‘রিটায়ার্ড আউট’। ব্যাটিং যখন ঠিকঠাক হচ্ছে না, দল যে প্রত্যাশা করছে তা পূরণ হচ্ছে না, তখন নিজের ইচ্ছায় মাঠ ছেড়ে যাওয়া বা দলের ডাকের সুযোগ ছেড়ে দেওয়া হয়ত সবচেয়ে বিব্রতকর ঘটনা। এবার সেই অভিজ্ঞতা পেতে হয়েছে রোস্টন চেইসকে।
সোমবার বাংলাদেশ সময় সকালে ফ্লোরিডায় পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের শেষ ম্যাচে চেইস ‘রিটায়ার্ড আউট’ হন।
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এটি রিটায়ার্ড আউটের দ্বাদশ ঘটনা। তবে পূর্ণ সদস্য দেশের ক্রিকেটারদের মধ্যে চেইসই প্রথম এই আউটের শিকার।
১৩ ওভার শেষে ক্রিজে নামেন চেইস। তখন জয়ের জন্য সাত ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রয়োজন ৮০ রান। কঠিন হলেও আধুনিক ক্রিকেটে অসম্ভব নয়। উইকেট ছিলো তখনও সাতটি। নামার পরই একটি বাউন্ডারি মারেন তিনি। কিন্তু এরপর সঠিক টাইমিং করতে পারেননি। এক পর্যায়ে তার রান দাঁড়ায় ১০ বলে ১০।
হারিস রউফের একটি বোলার ব্যাটের কানায় লেগে বাউন্ডারি পান চেইস। পরের বলে একটি রান নেন। এরপর ক্রিজ ছাড়তে হয় তাকে। ১২ বলে ১৫ রান করে রিটায়ার্ড আউট হন তিনি।
সময় দ্রুত ফুরিয়ে আসছিল। শেষ তিন ওভারে প্রয়োজন ছিল ৪১ রান। চেইসের জায়গায় জেসন হোল্ডারকে নামানো হয়। কিন্তু সেই কৌশল সফল হয়নি, কারণ হোল্ডার দ্বিতীয় বলেই আউট হন। শেষ পর্যন্ত ১৩ রানে হেরে যায় ক্যারিবিয়ানরা।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ‘রিটায়ার্ড আউট’ এখন আর বিরল নয়। কৌশলগত কারণে বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট ও টি-টোয়েন্টি লিগে এটি নিয়মিত দেখা যায়। চেইসের এই আউটটি ২০ ওভারের ক্রিকেটে ৪৮তম রিটায়ার্ড আউট।
তবে যতই সাধারণ হোক, বেশিরভাগ ব্যাটসম্যান এই আউটে এক ধরনের লজ্জা অনুভব করেন।
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে প্রথম ‘রিটায়ার্ড আউট’ হয়েছিল ২০১৯ সালে নেপালের কির্তিপুরে। মালদ্বীপের বিপক্ষে ৩৫ বলে ২৪ রান করে জন ভুটানের সোনাম টোবগে মাঠ ছেড়ে গিয়েছিলেন এভাবে।
প্রায় দুই বছর পর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ইউরোপিয়ান উপ-আঞ্চলিক বাছাইয়ে চেক রিপাবলিকের বিপক্ষে ফ্রান্সের ওপেনার হেভিট জ্যাকসন ৪৩ বলে ৩৮ রান করে রিটায়ার্ড আউট হন ১৫তম ওভারে।
সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই ওই একই টুর্নামেন্টে এস্তোনিয়ার বিপক্ষে ৩৯ বলে ৫০ রান করার পর আবারও একইভাবে মাঠ ছাড়েন জ্যাকসন।
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে দুইবার ‘রিটায়ার্ড আউট’ হওয়া একমাত্র ব্যাটসম্যান এখনও পর্যন্ত ফ্রান্সের এই ওপেনারই।
এরপর গাম্বিয়ার মুস্তাফা সুয়ারেহ, নামিবিয়ার নিকোলাস ডেভিন, গ্রিসের ক্রিস্তোদুলাস বোগদানোস, সংযুক্ত আরব আমিরাতের আলি নাসির, বতসোয়ানার ভিনু বালাকৃষ্ণান, নাইজেরিয়ার সেলিম সালাউ, সুইজারল্যান্ডের খালিদ নিয়াজি ও আমিরাতের ইথান ডি’সুজা এভাবে আউট হয়েছেন।
অভিজাত ক্রিকেট খেলুড়ে দেশ থেকে প্রথমবার এই তালিকায় নাম লিখালেন রোস্টন চেইস।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ‘রিটায়ার্ড আউট’ এর ইতিহাস শুরু হয় ২০০১ সালে। একই ইনিংসে এভাবে আউট হয়েছিলেন মারভান আতাপাত্তু ও মাহেলা জায়াওয়ার্দেনে। তবে তাদের এই বিদায়ের কোনো বিব্রতকর দিক ছিল না, বরং এটি ছিলো একটি কৌশলগত সিদ্ধান্ত। বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ৯০ রানে গুটিয়ে যাওয়ার পর বিশাল লিড নিয়ে মাঠ ছাড়েন তাঁরা, অন্যদের সুযোগ দেয়ার জন্য।
টেস্টে ‘রিটায়ার্ড আউট’ এর এই দুইটি ঘটনা ইতিহাসে একমাত্র; ওয়ানডেতে এর নজির নেই। টি-টোয়েন্টিতে এখন পর্যন্ত ১২টি ঘটনা হয়েছে, যা ভবিষ্যতে আরও বাড়তে পারে, এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়।